মামুন সিকদার:নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃক বাস্তাবায়নধীনে মাধ্যমে প্রতিটি জেলা, উপজেলার প্রত্যকটি পৌরসভা ও ইউনিয়নে একটি করে সরকারী কিশোর- কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাব সরকারি প্রকল্পের আওতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সকল জেলায় ২ জন করে ক্লাবের জন্য ফিল্ড সুপারভাইজারদের(জেলা) পরিদর্শন ও তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এই পরযন্ত সরকার ৪,৮৮৩ টি সরকারি কিশোর- কিশোরী ক্লাব সরকারিভাবে চালুকরণ করা হয়েছে। অন্যন্য জেলার মত চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও সরকারি কিশোর- কিশোরী ক্লাব ৪৫ টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার চার (৪) উপজেলা চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাংগার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রাথমিকভাবে ১ টি করে সরকারি কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। করোনা ভাইরাসের জন্য আপাতত বন্ধ হয়ে যায় সকল ক্লাবের কার্যক্রম। সেই সাথে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ ও কিশোর অপরাধ। (১ডিসেম্বর) ২০২০ থেকে প্রতিটি জেলা-উপজেলার ইউনিয়নের কাছাকাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে সরকারিভাবে। প্রতিটি ইউনিয়নের/উপজেলার নিকটস্থ হাই স্কুল থেকে ১০ জন কিশোর ও ২০ জন কিশোরী নিয়ে এই কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্লাবের সকল সদস্য ৭ম শ্রেণী থেকে ইন্টার-মিডিয়েট ক্লাসের ছাত্র- ছাত্রী। যাদের বয়স ১০-১৯ বছর বয়সী। দেশের সকল জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ (ইউএনও) ইউনিয়নের সংখ্যার উপর নির্ভর করে সরকারিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেন। সরকারি নিয়গবিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা ও ভাইভার মাধ্যমে ১ জন করে জেন্ডার-প্রোমোটার এবং প্রত্যেকটি ক্লাবের জন্য একজন করে সংগীত শিক্ষক ও একজন করে আবৃতি শিক্ষক ক্লাবে নিয়োগ পান। জেন্ডার-প্রোমোটারগণ কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার ভিত্তিক ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্পর্কে ক্লাবে ক্লাস নিতেন এবং সেই বিষয়ে ধারণা দিতেন। কিশোর অপরাধ থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে এবং নিজের দেশকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করতেন। ক্লাব ভিত্তিক বাল্যবিয়ের বিরদ্ধে সমাজের মানুষের মাঝে জনসচেতন সৃস্টি করছে কিশোর কিশোরী ক্লাব। কিশোর কিশোরী ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য বাল্যবিবাহ সমাজ থেকে দুর করা। শুধু তাই নয় সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সে আলোচনা করা হতো কিশোর- কিশোরী ক্লাবে। সমাজের ভালো-মন্দ ইতিবাচক দিকসহ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হতো এই ক্লাবে। ছেলে-মেয়েদের মানসিক আনন্দের জন্য সংগীত শিক্ষক আর কবিতা শিক্ষার আবৃতি শিক্ষক/শিক্ষিকারা কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং কিশোর-কিশোরীদের সংগীত শিখাতেন। করোনা-ভাইরাসে কিশোর-কিশোরীদের কথা চিন্তা করে কিশোর কিশোরীরা করোনায় আক্রান্ত না হয় সে জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সাময়িক সময়ের ক্লাব বন্ধ করে দেয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর গত ২০ (মার্চ) ২০২০ এর এক সরকারি আদেশের চিঠির মাধ্যমে ক্লাবের সকল কায্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এই করোনাকে ভর করে সমাজে বাড়ছে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদকাসক্ত, সেক্সচুয়াল হ্যারেজমেন্ট ও কিশোর অপরাধসহ নানা খারাপ কাজ। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় কিশোর-রা খারাপ সঙ্গ পেয়ে নানা ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন আর কিশোরী মেয়েরা প্রতিনিয়ত বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। মোবাইলে একজন জেন্ডার-প্রমোটারের সাথে কথা হলে তিনি আমাদের বলেন (দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকা ) অনলাইন পত্রিকা কে জানান, আমরা খুবই সুন্দরভাবে ক্লাব পরিচালানো শুরু করেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে করোনার প্রকট থাবায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, এবং কিশোর অপরাধ, কিশোরী ইভটিজিং, মাদক, যৌতুক থেকে কিভাবে কিশোর-কিশোরীদের বিরত রাখা যায় সেই বিষয়ে আমরা সব সময় কাজ করছি। ক্লাবে গিয়ে কিশোর -কিশোরীরা আস্তে আস্তে অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। কিশোর-কিশোরীদের ক্লাবে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু করোনা ভাইরাস এর কারণে যেতে পারছে না। আর কত দিন লাগবে ক্লাব খুলতে তার কোন খবর নাই। বাড়িতে থাকতে থাকতে সবাই ঝিমিয়ে যাচ্ছে, লেখাপড়া মন বসছে না। তাই আমরা কিশোর -কিশোরীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কিশোর -কিশোরীদের সাথে যোগাযোগ করে আসছি।
এই বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক জনাব, আব্দুল আওয়াল স্যারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি আমাদেরকে জানান, আমরা সরকারী নির্দাশনা পেলে আমার জেলার সকল ক্লাবের কার্যক্রম চালু করে দিবো। চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ টি উপজেলায় মোট ৪৫ টি সরকারি কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। ইতিমধ্যে আমরা করোনার ভিতর ৫টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। আপনারা বাল্যবিবাহ দিবেন না। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটলে আমাদের চুয়াডাঙ্গা মহিলা অধিদপ্তরকে জানান। আমি সহ আমার অফিসের সকল স্টাফ ব্যাবস্থা নিবে। আমার মতে, সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কিশোর-কিশোরী ক্লাব খুলে দিবেন ঢাকা হেড অফিসের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আমি আশা করি, কিশোর-কিশোরী ক্লাব সরকারের সবচেয়ে বড় পাইলটিং সরকারি প্রকল্প।
কিশোর-কিশোরীর মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নিরলাসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেলা ফিল্ড সুপারভাইজার এম কাবিল উদ্দিন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কিশোর -কিশোরী ক্লাবের ফিল্ড সুপারভাইজার আরও বলেন, তৃণমুল পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে কিশোর-কিশোরী ক্লাব বদ্ধপরিকর। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সরকার ন্যাশনাল হেল্প লাইনে ফ্রী কল ১০৯ এর ব্যবস্থা করেছেন। কল করতে কোন টাকা লাগে না। বাল্যবিবাহ যেখানেই ঘটুক না কেন নিকটস্থ প্রশাসন অথবা ১০৯ নাম্বারে ফ্রী কল করে আমাদেরকে জানান। দেশ,জাতি এবং কিশোর-কিশোরী বান্ধব সমাজ গঠনে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জনগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।